Provat Ahmed প্রকাশিত: ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৭:১০ এএম
হাজারো গ্রাহকের শতকোটি টাকা নিয়ে উধাও আহমেদিয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান। (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুরে ভুক্তভোগীরা প্রতিষ্ঠানটির সামনে বিক্ষোভ করেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দুই বছর ধরে নানা অজুহাতে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো: মনির আহমেদ।
ভুক্তভোগীদের একজন আবদুল কুদ্দুস শরবত বিক্রি করে একটু একটু করে ৫ বছর ধরে টাকা জমিয়েছেন । কথা ছিল এই টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান করে মেয়েকে পাঠাবেন শ্বশুরবাড়ি। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না ।
তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে আমাকে টাকাটা দেয়ার কথা ছিল। সেই হিসেবে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিই। টাকাটা এ পর্যন্ত দেয়নি। অফিসে এলে শুধু আজ না কাল, কাল না পরশু; এ রকম করে হয়রানি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি কিন্তু এখনো শ্বশুরবাড়িতে তুলে দিতে পারিনি।
এই প্রতারণার ভুক্তভোগী কেবল আবদুলই কুদ্দুস নন, এই ফাঁদে পড়ে কারও ভেঙেছে সংসার, আবার কেউ চিকিৎসা করাতে না পেরে হারিয়েছেন সন্তান। কেউ কেউ টাকা চাইতে এসে শিকার হয়েছেন মারধরেরও। তাই শেষ পর্যন্ত আহমেদিয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্সের অফিসে টাকার দাবিতে অবস্থান নেন গ্রাহকরা।
স্থানীয় এক ভুক্তভোগী বলেন, এখানে আমার ৬ লাখ টাকা আছে। এ টাকা চাইতে আসায় আমাকে কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তারা। আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয় যে আপনি কী করবেন? পারলে টাকা নেন, মালিকের কাছে যান, তাকে গিয়ে ধরেন!
এক নারী জানান, আমার স্বামী এই টাকার যন্ত্রণায় স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, তারা এখন আহমেদিয়া ফাইন্যান্স থেকে টাকা ট্রান্সফার করে ইউরোস্টারে নিয়ে যাচ্ছে। এখন তারা বলছেন যে তারা বর্তমানে ফাইন্যান্সে চাকরি করেন না, ইউরোস্টার গ্রুপে চাকরি করেন। কেবল নামটা পরিবর্তন করেছে, কিন্তু মালিকসহ সবাই এক।
প্রায় বিগত ১৫ বছর ধরে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক বিভিন্ন উপায়ে সঞ্চয়পত্র ও এফডিআরের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করত আহমেদিয়া ফাইন্যান্স আন্ড কমার্স। শুরুতে লভ্যাংশ ও মুনাফার কিছু টাকা গ্রাহকদের দেয়া হলেও ধীরেধীরে সুর পাল্টায় প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা। এক হাজার ১০০ গ্রাহকের ৯৮ কোটি টাকা আটকে রেখে প্রতিষ্ঠানের মালিক মনির আহমেদ চালু করেন ইউরোস্টার গ্রুপ নামে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
আহমেদিয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কর্মাস এমসিএস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, ৯৮ কোটি টাকার তালিকা আছে। এ ছাড়া ৩২ কোটি টাকা ফ্ল্যাটে সমন্বয় কর হয়েছে। এ সম্পদগুলো তাদের নিজস্ব। বাকি টাকাগুলোও সমন্বয় করার চেষ্টা চলছে। আর ছোটগুলো আগামী ডিসেম্বরে ক্লিয়ার করে এটা ক্লোজ করে দেয়া হবে।
এ ঘটনায় গ্রাহকরা বিভিন্ন সময়ে থানায় অভিযোগ জানায়, তবে মামলা না করায় ব্যবস্থা নেয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় থানায় এসেছেন। আমি সব সময় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তারা বলেছেন, মামলা করলে টাকা পাওয়া যাবে না। আর আমি তো আইনের বাইরে কোনো কথা বলতে পারি না। কিন্তু আমি তো মামলা ছাড়া তাদেরক ধরতেও পারি না।
এদিকে মালিক মনির আহমেদ বেশ কিছুদিন ধরেই লাপাত্তা বলছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।